হজ্ব

হজ্ব কি এবং হজ্বের ফজিলত

হজ্ব কি এবং হজ্বের ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম,

হজ্ব ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানের উপর হজ্ব ফরজ করা হয়েছে। প্রতিবছর ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই ওবোনেরা হজ্ব পালনের উদ্দশ্য সৌদি আরব গমন করেন। আজ আমি হজ্ব কি এবং হজ্বের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করবো ইশাল্লাহঃ

 

হজ্ব শব্দের অর্থ সংকল্প করা বা ইচ্ছা প্রশন করা। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুমিন মুসলমান বায়তুল্লাহ তায়েফ এবং বায়তুল্লাহর কালো গিলাফ ও কালো পাথর স্পর্শ করে জীবনের সকল গুনাহ এবং অসৎ কর্মের জন্য অশ্রুসিক্ত হৃদয়ে মহান আল্লাহ তালার কাছে ক্ষমা চাই. আল্লাহ চাইলে তাদের ইচ্ছা কবুল হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন।

হজ্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের ১০২ জায়গায় আলোচনা করে হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখজোগ্য কিছু আয়াত তুলে ধরবো ইনশাল্লাহ

পবিত্র কোরানের সূরা আল-বাকারার ১৯৭ নম্বর আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন;

 

اَلۡحَجُّ اَشۡهُرٌ مَّعۡلُوۡمٰتٌ ۚ فَمَنۡ فَرَضَ فِیۡهِنَّ الۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَ لَا فُسُوۡقَ ۙ وَ لَا جِدَالَ فِی الۡحَجِّ ؕ وَ مَا تَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ یَّعۡلَمۡهُ اللّٰهُ ؕ وَ تَزَوَّدُوۡا فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی ۫ وَ اتَّقُوۡنِ یٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ

“হজ্বের সময় নির্দিষ্ট মাসসমূহ। অতএব এই মাসসমূহে যে নিজের উপর হজ্ব আরোপ করে নিল, তার জন্য হজ্বে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। আর তোমরা ভাল কাজের যা কর, আল্লাহ তা জানেন এবং পাথেয় গ্রহণ কর। নিশ্চয় উত্তম পাথেয় তাকওয়া। আর হে বিবেক সম্পন্নগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর।”

 

সূরা হ্বজ এর ২২, ২৭ ও ২৮ আয়াতে বলা হয়েছে,

“আর তুমি মানুষের মাঝে হজ্বের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে হেঁটে এবং সব ধরনের (পথশ্রান্ত) কৃশকায় উটের ওপর সওয়ার হয়ে দূরদূরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের (দুনিয়া ও আখিরাতের) কল্যাণের জন্য সেখানে উপস্থিত হতে পারে এবং রিজিক হিসাবে তাদের দেওয়া গবাদিপশুগুলো জবেহ করার সময় নির্দিষ্ট দিনগুলোতে তাদের ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে”

মহান আল্লাহ তালা সূরা আল-ইমরানের ৯৭ আয়াতে ইরশাদ করছেন,

ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فان الله غنى عن العلمين.

 

মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্ব করা ফরয। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।

এছাড়া পবিত্র কোরানের অনেক আয়াতে হ্বজ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।
উল্লিখিত আয়াত থেকে এটা বোঝার আর বাকি থাকে না যে, প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানের উপর হজ্ব করা ফরজ আর যদি কেউ এটা অষিকার বা অগ্রহ্য করে আল্লাহতালা তারজন্য কঠিন থেকে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন।

চলুন এবার জেনে আছি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সে:) হজ্ব সম্পর্কে কি বলেছেন,
হজ্ব সম্পর্কে অসংখ হাদিস উল্লেখ আছে আসুন আমরা উল্লেখযগ্য কিছু হাদিস নিয়ে আলোচনা করবো:

ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত , রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

من أراد الحج فليتعجل، فإنه قد يمرض المريض وتضل الضالة وتعرض الحاجة.

যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭৩২)

আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন,

من حج فلم يرفث ولم يفسق غفر له ما تقدم من ذنبه.

যে ব্যক্তি হজ্ব করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮১১)
উক্ত হাদিসের আলোকে বলা যায়, হজ্ব পালন করে, পূর্বে করা সকল গুনাহ আল্লাহ তালা ক্ষমা করে দেন.

সহীহ বুখারীর ১৫২১ নম্বর হাদিসে এসেছে,

من حج لله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه.

আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল সেই রূপে।

মুসলিম শরীফের ১২১ নম্বর হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে,
أما علمت يا عمرو! أن الإسلام يهدم ما كان قبله، وأن الهجرة تهدم ما كان قبلها، وأن الحج يهدم ما كان قبله.

হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম (গ্রহণ) পূর্বেকার যাবতীয় পাপকে মুছে ফেলে। হিজরত তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয় এবং হজ্ব অতীতের পাপসমূহ মুছে দেয়।

অতএব, উক্ত হাদীসগুলোর আলোকে আমাদের সবাইকে হজ্ব করার তৌফিক দান করুন এবং আমাদের নিষ্পাপ হিসেবে কবুল করুন আমিন।

হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة.

এক উমরা হতে আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭৭৩)

আম্মাজান আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, যে তিনি বলেন-

يا رسول الله! نرى الجهاد أفضل العمل، أفلا نجاهد؟ قال : لا، لكن أفضل الجهاد حج مبرور.

ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বললেন, না। বরং তোমাদের নারীদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল হজ্বে মাবরূর। (সুবহানাল্লাহ)
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫২০)

সহীহ বুখারির এক হাদিসে এসেছে,

بينما رجل واقف مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بعرفة إذ وقع عن راحلته فأقعصته، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : اغتسلوه بماء وسدر، وكفنوه بثوبيه ولا تخمروا رأسه ولا تخطوه، فإنه يبعث يوم القيامة ملبيا.

ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত: এক ব্যক্তি আরাফাতের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে উফূফরত ছিলেন। হঠাৎ তিনি বাহন থেকে নীচে পড়ে গেলেন। এতে তার ঘাড় মটকে গেল এবং তিনি মারা গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বড়ইপাতা সিদ্ধকরা পানি দিয়ে গোসল দাও, তার দুই কাপড় দিয়ে তাকে কাফন পরাও। তাকে সুগন্ধি লাগিও না এবং তার মাথাও আবৃত করো না। কেননা তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ১২৬৭)

হজরত উমর রা. হতে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

من طاف أسبوعا يحصيه وصلى ركعتين كان له كعدل رقبة قال وسمعته يقول : ما رفع رجل قدما ولا وضعها إلا كتب له عشر حسنات وحط عنه عشر سئيات ورفع له عشر درجات.

যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফের প্রতি কদমে আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করেন, একটি করে নেকী লেখেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
(মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৪৪৬২)

উলক্ষিত হাদিস গুলোকে মোহাদ্দিসগণ সহীহ বলে মত পোষণ করেছন। ইসলাম একটি পরিপূর্ন জীবন বিধান। ইসলামের প্রথম ধাপ হলো ঈমান আনা এবং ইসলামে যা নিষেধ করেছে তা বর্জন করা এবং যা পালন করতে বলা হয়েছে তা সঠিক নিয়মে পালন করা। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, জাকাত প্রদান করা, রমজান মাসে সিয়াম পালন করা. এবং এতক্ষন যে বিষয় নিয়ে আলোকনা করলাম। অর্থাৎ সামর্থ থাকলে জীবনে অন্তত একবার হলেও হজ্ব পালন করা. মহানআল্লাহ তালা আমাদের সকলকে হজ্ব পালন করার তৌফিক দান করুন আমিন।

আলোচনায় কোথাও কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন আর ক্ষমা করার জোগ্য নাহলে সংশোধন করে দিবেন।
আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *