ঈমানসালাত

জুম্মার দিনের ফজিলত এবং গুরুত্বপূর্ণ আমল সূমহ

জুম্মার দিনের ফজিলত এবং গুরুত্বপূর্ণ আমল সূমহ

আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তালার নাম এবং মহান আল্লাহ তালার নাম নিয়ে শুরু করছি। আজ আমি জুমআর দিনের আমল সমর্র্কে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।

জুমুআ (جمعة) শব্দের অৰ্থ সমবেত হওয়া বা একত্রিত হওয়া। ইসলামের পরিভাষায় জুমুআ (جمعة) বলা হয় শুক্রবারে নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলমানদের মসজিদে একত্র হয়ে জামাতের সঙ্গে ২ রাকাত নামাজ আদায় করা হয় তাকে জুমুআর নামাজ বলা হয় ।

জুমার ২ রাকাত নামাজ। এই দুই রাকাত নামাজকে ফরজ করা হয়েছে । এবং ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, সে মোনাফিক হিসেবে এমন দফতরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তনও করা যাবে না। (তাফসিরে মাজহারি, খ- : ৯, পৃষ্ঠা : ২৮৩)

জুমার নামাজের গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন:-

{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (9) فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (10) وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا قُلْ مَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ وَاللَّهُ خَيْرُ } [সূরা জুমআ আয়াত ৯-১১]

হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত চলো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ খোঁজ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। তারা যখন কোন ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে তখন আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে তারা সেদিকে ছুটে যায়। বলুন: আল্লাহর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসায় অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। (সুরা জুমআ : আয়াত ৯-১১)

এছাড়াও নবীকরিম (স:) হাদীস শরিফে বর্ণনা করছেন :

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَدَنَا وَأَنْصَتَ وَاسْتَمَعَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا ‏”‏ ‏.‏

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে জুমার সালাতে এসে ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসলো এবং নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনলো, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সময়ের এবং আরও তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। আর যে ব্যক্তি কংকর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক কাজ করলো। (মুসলিম ৮৫৭, তিরমিযী ৪৯৮, আবু দাঊদ ১০৫০, আহমাদ ৯২০০, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১০৯০ তাহকিক্ব আলবানি: সহিহ)।

এছাড়াও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:

أَوْسُ بْنُ أَوْسٍ الثَّقَفِيُّ، قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ “‏ مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ وَبَكَّرَ وَابْتَكَرَ وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ وَدَنَا مِنَ الإِمَامِ فَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ – كَانَ لَهُ بِكُلِّ خَطْوَةٍ عَمَلُ سَنَةٍ أَجْرُ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا ‏”‏ ‏.‏

আওস বিন আওস আস-সাকাফী (রা.) থেকে বর্ণিত: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি জুমার দিন (স্ত্রী সহবাসজনিত) গোসল করলো এবং নিজে গোসল করলো এবং সকাল সকাল যানবাহন ছাড়া পদব্রজে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসলো, মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে খুতবাহ শুনলো এবং অনর্থক কিছু করলো না, তার জন্য প্রতি কদমে এক বছরের সাওম রাখা ও তার রাত জেগে সালাত পড়ার সমান নেকী রয়েছে। (তিরমিজি ৪৯৬, নাসায়ি ১৩৮১, ১৩৮৪, ১৩৯৮; আবু দাঊদ ৩৪৫, আহমাদ ১৫৭২৮, ১৫৭৩৯, ১৫৭৪২, ১৬৫১৩, ১৫৪৬-৪৭। তাহকিক্ব আলবানি: সহীহ)।

শুক্রবারের রাত ও দিনকে অন্য সব রাত ও দিন থেকে আলাদা করা হয়েছে এবং সকল দিন ও রাতের মধ্যে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান, সম্মান ও উজ্জ্বলকরা হয়েছে। শুক্রবার একটি পবিত্রতম দিন, তাই এর পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে এবং আল্লাহর ইবাদতে কাটাতে হবে এবং নেক আমলের মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হতে হবে এবং সমস্ত নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করতে হবে; কারণ আল্লাহ তাআলা এতে বরকত বাড়িয়ে দেন। সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম বলাহয়েছে।

আবু হুরায়রাহ্‌ (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূল (স:) বলেন,

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا ‏”‏ ‏.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এ দিন ‘আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাঁকে জান্নাতে দাখিল করা হয়েছে এবং এ দিন তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৮৬১।

হাদিসে কুদসিতে জুমার দিনকে মুমিনদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এছাড়াও অনেক ফযিলতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আনাস ইব্‌ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত:
عن أنس بن مالك -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «أتاني جبريلُ بمثل هذه المرآة البيضاء فيها نُكْتة سوداء، قلت: يا جبريلُ ما هذه؟ قال: هذا الجُمُعة جعلها الله عيدًا لك ولأمتك فأنتم قبل اليهود والنصارى، فيها ساعةٌ لا يوافقها عبدٌ يسأل الله فيها خيرًا إلا أعطاهُ إياه، قال: قلت: ما هذه النُكْتةُ السوداء؟ قال: هذا يوم القيامة تَقُوم في يوم الجمعة، ونحن ندعوه عندنا (المزيد) قال: قلت: ما يومُ المزيد؟ قال: إنَّ الله جعل في الجنة واديًا أفيح، وجعل فيه كُثْبانًا من المسك الأبيض، فإذا كان يومُ الجمعة ينزلُ الله فيه فوضعت فيه منابر من ذهب للأنبياء وكراسي من درٍّ للشهداءٍ، وينزلن الحورُ العينُ من الغُرف فحمدوا الله ومَجَّدوه، قال: ثم يقول الله: اكسوا عبادي فيكسون، ويقول: أطعموا عبادي فيطعمون، ويقول: اسقوا عبادي فيسقون، ويقول: طيِّبوا عبادي فيطيبون، ثم يقول: ماذا تُريدون؟ فيقولون: ربنا رضوانك، قال: يقول: رضيت عنكم ثم يأمرهم فينطلقون وتصعدُ الحورُ العين الغرفَ، وهي من زمردةٍ خضراء ومن ياقوتةٍ حمراء » . صحيح

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:-সাদা এ আয়নার ন্যায় অনুরূপ আয়না নিয়ে জিবরিল আমার নিকট এসেছে তাতে কালো একটি ফোঁটা। আমি বললাম: হে জিবরিল এটা কি? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে জুমা, আল্লাহ যা আপনার ও আপনার উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন, তোমরাই ইহুদি ও খৃস্টানদের পূর্বে, (অর্থাৎ তাদের সাপ্তাহিক ঈদের পূর্বদিন তোমাদের ঈদের দিন) তাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় বান্দা আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ প্রার্থনা করবে, যা তিনি তাকে দিবেন না(যা কিছু আল্লাহ তালার নিকট বান্দা ওই সময় চাইবেন আল্লাহ তালা তাকে সেটাই দেবেন সুবহানাল্লাহ)। তিনি বলেন: আমি বললাম, এ কালো ফোঁটা কি? তিনি বললেন, এ হচ্ছে কিয়ামত যা জুমার দিন কায়েম হবে, আমরা একে মাযিদ বলি। তিনি বলেন: আমি বললাম: ইয়াওমুল মাযিদ কি? তিনি বললেন: আল্লাহ জান্নাতে প্রশস্ত ময়দান তৈরি করেছেন, সেখানে তিনি সাদা মিশকের স্তূপ রেখেছেন, যখন জুমার দিন হয় আল্লাহ সেখানে অবতরণ করবেন, সেখানে নবীদের জন্য স্বর্ণের মিম্বার রাখা হয়, আর শহীদদের জন্য মুক্তার চেয়ার এবং (জান্নাতের) প্রাসাদসমূহ থেকে ‘হূরুল ঈন’ বা ডাগর নয়না হূর অবতরণ করে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ-গান করবে। তিনি বলেন: অতঃপর আল্লাহ বলবেন: আমার বান্দাদের কাপড় পরিধান করাও, তাদের কাপড় পরিধান করানো হবে। তিনি বলবেন: আমার বান্দাদের খাদ্য দাও, তাদের খাদ্য দেয়া হবে। তিনি বলবেন: আমার বান্দাদের পান করাও, তাদের পান করানো হবে। তিনি বলবেন: আমার বান্দাদের সুগন্ধি দাও, তাদের সুগন্ধি দেয়া হবে। অতঃপর বলবেন: তোমরা কি চাও? তারা বলবে: হে আমাদের রব আপনার সন্তুষ্টি। তিনি বলেন, তিনি বলবেন: আমি তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছি, অতঃপর তাদেরকে নির্দেশ দিবেন, তারা যাবে ও ‘হূরুল ঈন’ প্রাসাদসমূহে প্রবেশ করবে যা সবুজ মণি-মুক্তা ও লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি। (হাদিসে কুদসি, হাদিস নং ৯০ হাদিসের মান: সহিহ)।

জুমার দিনের কতিপয় বিশেষ আমলসমূহ:

১.ঘুম থেকে দ্রুত ওঠা ও পরিবারকে ওঠানো।
২. সূরা কাহ্ফ পাঠঃ করা।
৩. গোসল করা ও পরিবারকে গোসল করানো।
৪. উত্তম পোশাক পরিধান করা।
৫. আগে আগে মসজিদে যাওয়া।
৬. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
৭. ইমামের কাছাকাছি বসা।
৮. কাউকে টপকিয়ে বা ঠেলে সামনে না যাওয়া।
৯. কথা না বলা এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করা।
১০.সুগন্ধি ব্যবহার করা (যদি থাকে)।
১১. বেশি বেশি প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স:)এর উপর দরূদ পাঠ করা।
১২. বেশি বেশি ইস্তেগফার ও দোয়া করা।
১৩. সবসময় ওযু অর্থাৎ পরিষ্কার পরিছন্ন থাকা।


জুমার দিন স্পথাহের মধ্যে শ্রেষ্ট দিন। দিনেই আমাদের আদি পিতাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে. আল্লাহ তালা আমাদেরকে উপরোক্ত আমল গুলো বুঝে শুনে এবং মানার তৌফিক দেন করুন আমিন। এবং উপরোক্ত আলোকনার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি থাকে ক্ষমা করে দিবেন অথবা সংশোধন করে দিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *