ইসলামঈমান

কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়া

দোয়া শব্দ দিয়ে আল্লাহকে ডাকা, কিছু চাওয়া, শব্দের বিনয়ের সাথে দোয়া করা, সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে এবং প্রযুক্তির কাছে কল্যাণ চাওয়া যাতে এটি ক্ষতি এবং ক্ষতি থেকে স্থায়ী হয়।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সাহায্যের মাধ্যমে সাহায্য করা এই দোয়াকে ইবাদত বলে। তাই রাসূল (সাঃ) এর চরিত্র ও কথার মাধ্যমে দোয়া করা অপরিহার্য, একটি মুসলিম নির্দেশ।

আল্লাহ বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি ডাকে সাড়া দেব এবং যারা আমার ইবাদতে গর্বিত তারা শীঘ্রই জাহান্নামে পাবে এবং অপমানিত হবে” (সূরা আল-মুমিন, আয়াত ৬০)।

আল্লাহ তায়ালা কোনো কথাবার্তা, রহমত, বরকত, ক্ষমা, হেদায়েত ছাড়াই কথা বলেন। তাই দ্রুত তাকে ডাকলে তায়ালা বান্দার উপর সকল বরকত দান করবেন।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালা, কোন কিছুকে তাঁর দিকে ডাকতে, তাঁর কাছে কোন ভাল বা মতবাদ ব্যবহার করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যা আবেদনকারী বা আবেদনকারীদের জন্য প্রয়োজনীয়। হাদিসে আপনার কাছে দোয়া করার ক্ষেত্রে ২টি জিনিসের গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হল-

বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতা হজরত আবু সাঈদ খুদ (সা.) এর কর্তৃত্বে যিনি বলেছেন, “যখন একজন মুসলমান অন্য ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করে, তখন আমি কোনো পাপ বা আত্মীয়তার কথা চিন্তা করি না; এই দোয়ার সাহায্যে আল্লাহ তাকে তিনটি উপহারের একটি দেন-

> সে দ্রুত রাজি হয়ে গেল;
পরকালে তার প্রতিদানে উপস্থিত হওয়া; তোমার
তার থেকে অনুরূপ বিপদ দূর করে।

রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি নামায পড়ব। প্রধান নেতা (সা.) বলেন, আল্লাহ বেশি দোয়া কবুল করেন। (মুসনাদে আহমাদ, মীকাত)

এ ব্যাপারে অন্যান্য শর্তের সাথে বেশ কিছু শর্তও উল্লেখ করা হয়েছে। যা শুধু দোয়াই কবুল হয় না, সকল দোয়া কবুল হয় পূর্বশর্ত হিসেবে। তারা হল-

> আবেদনকারীর খাদ্য, পানীয় এবং পোশাক থাকতে হবে। (অর্থাৎ হারাম অর্থ বড়ে না ভাই)
> দোয়া কবুলের জন্য ব্যস্ত রাত।
> দোয়া কবুলের সময় দরদাসিন হল সতর্ক নাক এবং উদার আশাবাদী তারকা’ (সনদ আহমদ, মীকাত ও মিজি)।

মনে রাখবেন:
কারো অন্যায় বা পাপের জন্য আমার কাছে মিনতি করা বা আমার কাছে মিনতি করা। যে ক্ষমা করে, আল্লাহ তাকে ডাকেন এবং ক্ষমাকারীর চাহিদা পূরণ করেন। এমনই আল্লাহ

তাই উল্লেখিত হাদীসের শর্তানুযায়ী ধীরে ধীরে হালাল খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রিয় আয়াত ও দোয়া উল্লেখ করে-

(1) বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ উপশমের জন্য গৃহীত ব্যবস্থা:

আবেদন:

জন্য

উচ্চারণ:

লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইনি কুনতু মিনাজ জালিমিন।

অর্থ:

তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার আশা প্রকাশ করছি. অবশ্যই আমি একজন পাপী। (সূরা: আল আম্বিয়া, আয়াত: 87)

গুণাবলী:

(ক) আল্লাহতায়ালা আয়াতে বলেন, আমি ইউনুসের দোয়া কবুল করেছি। আমি তাকে দুঃখ থেকে মুক্তি দিয়েছি। একইভাবে যারা মুমিন এই দুআ করবে, আমি তাদের অনেক কষ্ট থেকে মুক্তি দেব। – (সূরা: আল আম্বিয়া, আয়াত: 88)

(খ) হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজরত ইউস (আ.)-এর নামে দোয়া করে, আল্লাহ তায়ালা তার ডাকে সাড়া দেন, যদি সে বিপদে পড়ে। (তিরমিযী)

(গ) হযরত পলিস (সা.) আমার ভাই ইউনুসের দুআটি সুন্দর বলেও পরামর্শ দিয়েছেন। এর প্রথম অংশে রয়েছে কালিমায়ে প্রাচীবা। পথে তসবিহ আছে। আর শেষ অংশ হলো অপরাধের শক্তি। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, দুঃখী, বিপদগ্রস্ত যে কেউ দিনে তিনবার এই দুআ পাঠ করবে এবং আল্লাহ তায়ালা তার ডাকে সাড়া দেবেন। (কানজুল উম্মাল)

আমল:

কঠিন বালা-মুসিবত দূর করার জন্য বর্ণিত দোয়া বা আয়াতটি এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, ওই দোয়া হয়।

(২) শিশুর জিদ দূর করার আমল:

দোয়া:

أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ

উচ্চারণ:

আফাগাইরা দীনিল্লাহি ইয়াবগুনা ওয়ালাহু আসলামা মান ফিস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদি তাউআউ ওয়া কারহান; ওয়া ইলাইহি ইয়ুরজাঊন।

অর্থ:

তারা কি আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তে অন্য জীবন ব্যবস্থা তালাশ করছে? নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক তার অনুগত হবে। সবাই তার কাছে ফিরে যাবে। -(সূরা: আল ইমরান, আয়াত: ৮৩)

ফজিলত:

যে ব্যক্তির সন্তান বা প্রাণী তাকে কষ্ট দেয়, সে যেন তার কানে সূরা আল ইমরানের ৮৩ নং আয়াত পড়ে। (তাবারানি)

আমল:

সন্তানের অতিরিক্ত জিদ থাকলে, কথা না শোনলে, কথা না মানলে প্রতিদিন ৭ বার সন্তানের কপালের উপরিভাগের চুলে হাত রেখে এ আয়াতখানা পাঠ করে তার চেহারা ও কানে ফুঁ দিলে- জিদ কমে আসে। এ আমল নূন্যতম ২১ দিন লাগাতার করতে হয়।

(৩) শ্রেষ্ঠ দোয়া:

দোয়া:

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ:

রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ্, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ্। ওয়াকিনা আজাবান্নার।

অর্থ:

হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে সুখ দান কর, আখেরাতেও সুখ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ২০১)

ফজিলত:

এ দোয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়ে থাকে। নবী করিম (সা.) এ দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পাঠ করতেন।

বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত কাতাদাহ (রহ.) সাহাবী হজরত আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, নবী করিম (সা.) কোন দোয়া বেশি করতেন? উত্তরে সাহাবী হজরত আনাস (রা.) উপরোক্ত দোয়ার কথা জানালেন। তাই হজরত আনাস (রা.) নিজে যখনই দোয়া করতেন তখনই দোয়াতে এই আয়াতকে প্রার্থনারূপে পাঠ করতেন। এমনকি কেউ তার কাছে দোয়া চাইলে তিনি তাকে এ দোয়া দিতেন। (সহীহ মুসলিম)

হজরত আনাস (রা.) আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালা এ দোয়ায় দুনিয়া ও আখেরাতের সকল কল্যাণ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা একত্রিত করে দিয়েছেন।

(৪) দ্বীনদার স্ত্রী লাভের আমল:

দোয়া:

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণ:

রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররি-ইয়্যাতিনা কুররাতা আয়ুনিওঁ-ওয়াজআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।

অর্থ:

হে আমার প্রভু! স্ত্রী ও সন্তানদের দ্বারা আমার চোখ শীতল কর। আমাকে পরহেজগারদের আদর্শ কর। (সূরা: ফোরকান, আয়াত: ৭৪)

আমল:

যারা বিয়ে করেননি তারা প্রত্যেক নামাজের (তা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল যেকোনো নামাজ হোক) শেষ বৈঠকে দোয়ায়ে মাছূরা পড়ার পর কোরআনে বর্ণিত এই আয়াতখানা পাঠ করে সালাম ফিরাবেন। বিয়ের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এ আমল করলে আশা করা যায়, আল্লাহভক্ত দ্বীনদার, পরহেজগার ও আদর্শ স্ত্রী জুটবে।

আর যারা বিয়ে করেছেন তারা স্ত্রী ও সন্তানদের দ্বীনদার করার জন্য, তাদের আদর্শবান করে গড়ে তোলার জন্য- প্রতিবার দোয়ায় এ আয়াত পাঠ করলে বিশেষ উপকার লাভ হয়।

(৫) রিজিক বৃদ্ধির আমল:

দোয়া: اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ

উচ্চারণ:

আল্লাহু লাতীফুম্ বি-ইবাদিহি ইয়ারজুকু মাইয়্যাশায়ু, ওয়া হুয়াল কাভিয়্যুল আজিজ।

অর্থ:

আল্লাহ তায়ালা নিজের বান্দাদের প্রতি মেহেরবান। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী। (সূরা: শুরা, আয়াত: ১৯)

আমল:

যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে, একনিষ্ঠতার সঙ্গে ৭০ বার এ আয়াত পড়বে, সে সর্বদা রিজিকের সঙ্কট থেকে হেফাজতে থাকবে।

(৬) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির আমল:

স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকেই নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী নিজে অথবা তার পিতা-মাতা প্রতিদিন প্রত্যেক নামাজের পর সূরা আলাম নাশরাহ পড়ে তার বুকে ফুঁ দিবে। সূরা পাঠ করার শুরু ও শেষে একবার করে দরূদ শরিফ পড়বে। যদি শিক্ষার্থী সমঝদার হয়, তবে প্রতিবার পড়তে বসার সময়, প্রত্যেক ক্লাসের শুরুতে, শিক্ষার প্রতিটি আসরের শুরুতে আগে-পরে দরূদ শরিফসহ এ সূরা পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দিবে। যে নিয়মিত এ আমল করবে, আল্লাহর রহমতে তার স্মৃতিশক্তি বাড়বে।

দোয়ার জন্য হাদিসে বিশেষ কিছু স্থান ও সময়ের ব্যাপারে তাকীদ এসেছে, যেগুলো সংক্ষেপে বর্ণিত হলো:

(১) কোরআনী দোয়া ব্যতিরেকে হাদিসে বর্ণিত দোয়া সমূহের মাধ্যমে সিজদায় দোয়া করা
(২) শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে
(৩) জুমার দিনে ইমামের মিম্বরে বসা হতে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়কালে
(৪) রাত্রির নফল সালাতে
(৫) সিয়াম অবস্থায়
(৬) রামাজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ বেজোড় রাত্রিগুলোতে
(৭) সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে উঠে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দু’হাত উঠিয়ে
(৮) হজের সময় আরাফাতের ময়দানে দু’হাত উঠিয়ে
(৯) মাশ‘আরুল হারাম অর্থাৎ মুযদালিফা মসজিদে অথবা বাইরে স্বীয় অবস্থান স্থলে ১০ই জিলহাজ্জ ফজরের সালাতের পর হতে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত দোয়া করা
(১০) ১১, ১২ ও ১৩ জিলহাজ্জ তারিখে মিনায় ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর একটু দূরে সরে গিয়ে দু’হাত উঠিয়ে দোয়া করা
(১১) কাবাগৃহের তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে।
(১২) ‘কারোর পিছনে খালেছ মনে দোয়া করলে, সে দোয়া কবুল হয়। সেখানে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন। যখনই ওই ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, তখনই উক্ত ফেরেশতা ‘আমীন’ বলেন এবং বলেন তোমার জন্যও অনুরূপ হোক’। (মুসলিম)

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী হাদিসের ওপর আমল সাপেক্ষে আল্লাহর কাছে যথাযথভাবে ধরনা দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের প্রয়োজন পূরণে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *